আমার প্রান প্রিয় ছাত্ররা

About Me

-----------------------------------------------আসসালামু আলাইকুম--------------------------------------------
 আমি আলামিন সানি ।  (বরিশাল, বরগুনা, তালতলী উপজেলার কড়ইবাড়িয়া ইউনিয়নের  ৮ নং ওয়ার্ডে ৬-১-১৯৯৮ ) জন্মগ্রহণ । তিন ভাই-তিন বোন সাথে বাবা মাকে নিয়ে আমার পরিবার।পরিবারে সবচেয়ে ছোট ছেলে আমি। ছোটবেলা থেকেই বাবা-মার ইচ্ছা মাদ্রাসাতে  পড়াবে। বাবা-মার ইচ্ছা পূরণ করার জন্য আমি হেফজ পড়েছিলাম। হাফিজি মাদ্রাসার ধরা  বান্দা পড়া আমার মনে জায়গা করে নিতে পারেনি। তাই অন্য পথ খোঁজা অবলম্বন করলাম। ছোটবেলাতে মাদ্রাসা ইস্কুল কলেজ ফাঁকি দেয়ার অন্যতম বিশেষজ্ঞ ছিলাম আমি। এর জন্য বাবা-মায়ের অনেক বকাঝকাও খেয়েছি। আমার এখনো মনে আছে মা আমার জন্য প্রতিদিন একটা করে লাঠি বানিয়ে রাখত।  হাফিজি মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে আসার কারণে আমাকে সবাই অবজ্ঞা করতে শুরু করল। হাফিজি মাদ্রাসা থাকা অবস্থায় আমার কাছে 50 টা টাকা ছিল। এবার নিজের প্রচেষ্টায় ওই 50 টাকা দিয়ে আমি একটি আলিয়া মাদ্রাসায় চতুর্থ শ্রেণীতে ভর্তি হই। ভর্তি হওয়ার কাহিনী টা ও ছিল অন্যরকম। মাত্র 50 টাকায় সুপারিনটেনডেন্ট আমাকে ভর্তি করাবে না বিধায় আমি তার পা ধরে কেঁদে ছিলাম।আসলে ছোটবেলা থেকেই আমার মনের ইচ্ছা ছিল আমি বাংলা লাইনে পড়াশোনা করব।এরপরে মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা অধ্যায়ন করা শুরু করলাম। আমাদের চতুর্থ শ্রেণীতে প্রায় 70 জন ছাত্র ছাত্রী ছিল। বন্ধুদের মন জোগাতে আমার বিন্দুমাত্র কষ্ট হতো না। যাই হোক দীর্ঘ এক বছর পড়াশোনা করার পর পঞ্চম শ্রেণীতে আমার রোল নং হয়েছিল ৫ । পড়াশোনার প্রতি অতি প্রবল ভালোবাসা থাকার কারণে ফ্যামিলি থেকে আমাকে বলল। ক্লাস ষষ্ঠ শ্রেণীতে যদি আমার রোল নং এক হয় তাহলে সবাই আমাকে মেনে নিবে এবং পড়াশোনা করার জন্য আর্থিক সহযোগিতা করবে। লক্ষনীয় যে এর আগে আমার ফ্যামিলি থেকে কোন টাকা পয়সাই আমি পাইনি। কারণ তারা ভেবেছিল এটা যে টাকা পয়সা না পেলে আমি হয়তো বা বাধ্য হবো হাফিজি পড়ার জন্য। ফ্যামিলির এরকম হ্যাঁ বোধক কথা শুনে আমি খুব মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনার প্রতি প্রলোভিত হলাম। এবং আল্লাহর অশেষ  রহমতে ষষ্ঠ শ্রেণীতে আমি প্রথম স্থান অধিকার করলাম। ক্লাসের ক্যাপ্টেন নির্বাচিত হলাম। এরপর থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত আমার রোল নং সব সময় প্রথমেই থাকতো অর্থাৎ এক। ছোটবেলা থেকেই ইলেকট্রিক যন্ত্রাংশের প্রতি আমার প্রবল আগ্রহ ছিল। প্রতিদিন ক্লাস ফাকি দিয়ে আমার ভাইয়ের দোকানে গিয়ে বসলাম। ভালো ভালো মোবাইল নিজে সারাতে গিয়ে নষ্ট করে ফেলতাম। তবে কখনো এর জন্য কারো কাছে সাহায্যের হাত বাড়াতাম না। ভাবতাম এই সমস্যাটি কিভাবে সমাধান করা যায়। এবার মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করে রেজাল্টের  অপেক্ষা। এর ভিতর একদিন আমার মেজো ভাই আমার কাছে 10 হাজার টাকা দিয়ে বলে সানি এইটাকা গুলো  মার কাছে গিয়ে দিবে। ভাই এর কথা অনুযায়ী টাকাগুলো পকেটে নিয়ে রাখলাম। বাজারে ছিল ঐদিন এক বিশাল জনসভা। ছোটবেলা থেকে রাজনীতির সাথে ও কিছুটা জড়িয়ে ছিলাম।  মেইন দল দুটোর মধ্যে একটি দলে ইউনিয়ন পর্যায়ের একটি পদ  ও পেয়েছিলাম। এর ভিতরেই বন্ধুদের সাথে আড্ডায় জমে গেলাম। রাত প্রায় একটা। এই মুহূর্তে বাহিরে থাকাটা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। বাড়িতে মায়ের লাঠির কথা মনে পড়ায় বাড়ির দিকে রওনা করে দিলাম। বাড়িতে গিয়ে মাকে কোন মত উল্টা-পাল্টা বুঝিয়ে ভাত খেতে বসলাম। এরকম সময়ে পকেট এ্ হাত দিয়ে দেখি টাকা টা  উধাও। মাকে বলাতেই বালিশের নিচ থেকে লম্বা একটি লাঠির বের করে হাতে পায়ে মারা শুরু করলো। পরেরদিন কোনভাবে সূর্যটা উঠেছে কেবলমাত্র এসময়ই বাড়ি থেকে সকল জামা কাপড় গুছিয়ে বাড়ি ছাড়লাম। বন্ধু বান্ধবের  বাসাতে  দুই-একদিন রইলাম কিছু দিন পরে দেখলাম বন্ধু বান্ধবের মা বাবা একটু ন্যাড়া ভাবে আমাকে দেখছে। যাইহোক বাধ্য হয়ে সবাইকে ছেড়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা করলাম। গাড়ি ভাড়া নেই তাই গাড়ির ছাদে লুকিয়েছিলাম সারারাত। যাই হোক যেভাবেই হোক না কেন ঢাকাতে এসে নামলাম। এবার গুটি গুটি পা দিয়ে   আমার মামার বাসায় গিয়ে উঠলাম। মামা আমাকে অনেক ভালোবাসে।ছোটবেলা থেকেই কোন কিছুর প্রয়োজন হলে মামার কাছে বায়না ধরতাম। মামার বাসায় বেশ  কিছুদিন থাকার পরে মামী আর আমাকে সহ্য করতে পারলো না। তাই বাধ্য হয়ে এবারও এই গন্তব্য ছাড়তে হবে। মামাকে আমিও অনেক অনুনয় বিনয় করে বললাম মামা আমাকে একটি মসজিদের চাকরি জোগাড় করে দিন। আমার মামাও ছিল একজন মসজিদের ইমাম। ছোটবেলা থেকেই আমার গলার ভয়েস ছিল অসাধারণ।আমার মাদ্রাসার কোন প্রবলেম হলে ওই প্রোগ্রামে আমি অবশ্যই এটেল করতাম এবং অবশ্যই পুরস্কার জিতে নিতাম। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার উদ্যোগ তো জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ থেকে ঢাকা থানা এবং জেলা পর্যায়ে আমি একটি গানে অংশগ্রহণ করেছিলাম। এবং সেখান থেকে সরকারিভাবে পুরস্কার প্রাপ্ত হয়েছি। যাইহোক এবার একটা মসজিদ ঠিক হলো আমার জন্য। পেশা  মুয়াজ্জিন। জীবন যুদ্ধের প্রথম পা মসজিদ দিয়েই শুরু হয়েছিল।  নারায়ণগঞ্জ জালকুড়ির  সবচেয়ে বড় মসজিদের মোয়াজ্জেম নির্বাচিত হই।  ঝালকুরির  কোন মসজিদে চাকরি করতে হলে অন্যতম একটি শর্ত হলো আপনার কন্ঠ সুন্দর থাকতে হবে অথবা আপনাকে কণ্ঠশিল্পী হতে হবে। ছোটবেলা থেকেই যে কোন শিক্ষা গ্রহণ করতে আমার ভালো লাগতো। সেটা খারাপ হোক অথবা ভালো হোক। যাই হোক যে কথায় ছিলাম, প্রথম মাসের বেতন দুই হাজার টাকা পেয়ে এক হাজার টাকা আমি বাড়িতে মাকে পাঠিয়ে দিলাম আর এক হাজার টাকা দিয়ে আলেমে { পূর্ব কদমতলী ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা}  ভর্তি হলাম। লক্ষ্য একটাই পড়াশোনা করে অনেক বড় হওয়া। দুই হাজার টাকা বেতনে চাকরি করে আমার ভরণপোষণ অনেকটা কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে আযান টা জান দিয়ে ফ্রেশ হয়ে মাদ্রাসায় চলে যেতাম। দুপুরে বারোটার সময় মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে আসতে হতো এসে মসজিদে আজান দিতে হতো। টাকা বাঁচানোর জন্য কখনো কখনো দৌড়াতে দৌড়াতে আসতাম গাড়িতে উঠতাম না।
এরপর ভাবতে শুরু করলাম জীবনে কিছু একটা করতে হবে। মাঝে মাঝে মেজ মামার মোবাইল ধরে ইউটিউব দেখতাম। একদিন একটি ভিডিওর সামনে এলেই দেখতে পারলাম প্রতিদিন 500 টাকা ইনকাম করুন। এই লেখা দেখে ভিডিওটি পুরোপুরি দেখলাম এবং একইভাবে আমি ওই পদ্ধতি এপ্লাই করা শুরু করলাম। এবং বাড়ির সবাইকে হাই দেওয়া শুরু করলাম আমি আর কিছুদিনের মধ্যেই অনেক টাকা ইনকাম করব।ইউটিউব এর ভিডিও দেখার পরে আমি বিভিন্ন ধরনের অ্যাপস নিয়ে কাজ করা শুরু করি দীর্ঘদিন কাজ করার পরেও আমি ইউটিউবে ভিডিও দেখে এক টাকাও ইনকাম করতে পারেনি। এরপর ভাবতে শুরু করলাম ইউটিউব এ যা কিছু আছে সবই মিথ্যা। এর মধ্যেই দুই থেকে তিন মাস কেটে গেল। আবারো একদিন মামার মোবাইল দিয়ে ইউটিউব দেখতেছিলাম হঠাৎ করে শুনলাম গ্রাফিক্স নামের কিছু একটা কাজ আছে যেটার মাধ্যমে হাজার হাজার টাকা ঘরে বসে ইনকাম করা সম্ভব। ভিডিওটি দেখে নিজেকে থামিয়ে রাখতে পারলাম না। কিন্তু কিবা করব আমার কাছে তো কোন ল্যাপটপ অথবা কম্পিউটারে নেই যার মাধ্যমে আমি কাজটি শিখব। যাই হোক তখন 200 টাকা করে প্রাইভেট পড়ানো শুরু করলাম। সেমিস্টার পরীক্ষা না দিয়ে টাকাগুলো জমাতে শুরু করলাম।এরকম করতে করতে আমার কাছে প্রায় পাঁচ হাজার টাকার মতো হয়েছিল। আমার বন্ধুর একটি ল্যাপটপ ছিল। ওই ল্যাপটপটির দাম ছিল না চার্জার ছিল না এবং ডিসপ্লে ভাঙ্গা ছিল।ওই ল্যাপটপটি আমি কোন মতে ভুলভাল বুঝিয়ে নিয়ে আসলাম এবং উক্ত পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে ল্যাপটপ টাকে মোটামুটিভাবে সাজিয়ে নিলাম। ল্যাপটপ টি ছিল অনেক পুরাতন কখনো কখনো ওপেন করতে করতেই হ্যাং করে যেত। গ্রাফিক্সের কাজ করতে গেলে সর্বমোট 2 টি সফটওয়্যার এর ভূমিকা অপরিসীম একটি হল এডোবি ফটোশপ এবং অন্যটি হলো এডোবি ইলাস্ট্রেটর। ল্যাপটপ টি মাঝে মাঝে হ্যাং করার কারণে বুদ্ধি খাটিয়ে ল্যাপটপ এর নিচে একটি বড় ফ্যান সিট করেছিলাম যাতে করে ল্যাপটপ ঠান্ডা থাকে। এবার মসজিদের চাকরিটাও ছেড়ে দিলাম কারণ আমাকে গ্রাফিক্সের কাজ শিখতে হবে। আমি আমার বড় ভাইয়ের কাছে থাকা শুরু করলাম। মাঝে মাঝে রাত চারটা বেজে যেত তবুও ঘুমাতাম না বলে বড় ভাই অনেক রাগারাগি করতো। পৃথিবীর সবার চাইতে আমি আমার বড় ভাইকে ভয় পেতাম বেশি।সে ঘুমাতে পারতো না বিধায় আমি একটি লুঙ্গি হাতে নিয়ে লুঙ্গির উপর দিয়ে বাদ দিতাম। এরপরে আমার মাথায় দিতাম এবং ল্যাপটপ এর উপরে দিতাম যাতে আলো ভাইয়ের ঘুমকে ডিস্টার্ব না করতে পারে এবং আমি যেন আমার কাজ চালিয়ে যেতে পারি। এভাবে প্রায় অনেক দিন না ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিয়েছি। মনের অজান্তে কখন যে ফজরের আজান দিয়ে দিয়েছে তা বুঝতেও পারেনি। দীর্ঘ সাত মাস কষ্ট করার পরে এবার আমি কাজটি মোটামুটি ভাবে কমপ্লিট করতে পেরেছি। (পোস্ট পেন্ডিং)
Powered by Blogger.